বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম শাহজালাল (রহ.)। তাঁর জীবন, সাধনা ও বিজয়ের কাহিনি শুধু একটি ধর্মীয় ঘটনা নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে ইতিহাসের এক বীরত্বগাঁথা। আজকের ব্লগে আমরা জানবো কীভাবে এক মুসলিম সাধকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ অংশ নিয়েছিলো এক ন্যায়ের যুদ্ধে—যেখানে ধর্মীয় নির্যাতন, সামরিক কৌশল এবং আধ্যাত্মিক শক্তির এক অবিশ্বাস্য মিলন ঘটেছিল।
শুরুটা হয় এক নিষ্ঠুর ঘটনার মাধ্যমে...
![]() |
তৎকালীন সিলেট অঞ্চলের হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দ ছিলেন মুসলিম বিদ্বেষী। একবার স্থানীয় এক সচ্ছল মুসলিম গৃহস্থ শেখ বুরহানউদ্দিন তাঁর নবজাতকের আকীকা উপলক্ষে গরু কোরবানি দেন। এই কাজকে “রাজ্য অবমাননা” মনে করে গৌর গোবিন্দ তাঁকে কঠোর শাস্তি দেন—নবজাতককে হত্যা করা হয়, এমনকি বুরহানউদ্দিনের হাত কেটে ফেলা হয়।
বিচারের খোঁজে বুরহানউদ্দিন
এই নির্মম ঘটনাকে ন্যায়ের পথে আনার জন্য শেখ বুরহানউদ্দিন প্রথমে সোনারগাঁয়ে সুলতান ইলিয়াস শাহের দরবারে হাজির হন। যদিও সেখানে যুদ্ধ হয়, মুসলিম বাহিনী সফল হয় না। এরপর তিনি লাখনৌটির সুলতান ফিরোজ শাহের শরণাপন্ন হন। সুলতান এবার সৈয়দ নাসিরউদ্দিনকে পাঠান গৌড় রাজ্য আক্রমণের জন্য।
শাহজালালের আবির্ভাব – আধ্যাত্মিক শক্তির সংযোগ
পথিমধ্যে সৈয়দ নাসিরউদ্দিনের বাহিনী এক কুয়ার পাশে বিশ্রাম নেয়। সেখানেই প্রথম দেখা হয় ইয়েমেন থেকে আগত মহান সাধক হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি তখন ভারতবর্ষে ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছিলেন, কিন্তু এখনো বড় কোনো সাফল্য আসেনি। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া সুযোগ মনে করেন।
তাঁর তিনশত ষাট জন সঙ্গী সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে একত্রিত হন মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে। এক নতুন জোট গড়ে ওঠে, যা আধ্যাত্মিক শক্তি ও সামরিক কৌশলের এক দুর্ধর্ষ মিশ্রণ।
শেষ লড়াই – গৌড় গোবিন্দের পতন
পরাজয়ের আশঙ্কায় গৌর গোবিন্দ পালিয়ে যান তাঁর স্ত্রী ইরাবতীকে নিয়ে। কিন্তু অপমান সহ্য করতে না পেরে শুনা যায়, তিনি নৌকা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ইসলামের বিজয় – একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু
এই যুদ্ধের মাধ্যমে হিন্দু রাজত্বের অবসান ঘটে সিলেটে, এবং ইসলামের পতাকা উড়তে থাকে বাংলার ঘরে ঘরে। শাহজালাল (রহ.) এখানেই থেমে যাননি। তিনি জীবনভর ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত থেকেছেন, আর তাঁর সঙ্গীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন দ্বীন প্রচারের কাজে।
শেষ কথা
এই কাহিনি শুধু একটি যুদ্ধের গল্প নয়, বরং তা আমাদের শেখায়—কীভাবে বিশ্বাস, ন্যায় এবং নেতৃত্ব মানুষকে অসাধ্য সাধনে সহায়তা করে। শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সাথীদের আত্মত্যাগ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।